Thursday, September 1, 2016

BENGALI RASGULLA RECIPE

স্পঞ্জ রসগোল্লা কীভাবে বানাবেন
স্বাতীদি একসময় আমার অধ্যাপিকা ছিলেন। পরে ওনার সঙ্গেই একসাথে কিছুদিন কাজ করার সৌভাগ্যও হয়েছিল। এখন বয়সের পার্থক্য সত্ত্বেও উনি আমাকে বন্ধুর মতই দেখেন!
ওনার স্বামী কমল দা (আর স্বাতীদি নিজেও) দরাজ মনের মানুষ। সদাহাস্যময়। ওনাদের সঙ্গ পেলে অনেক মন খারাপ অবস্থাও অনায়াসে কাটিয়ে ওঠা যায়!
একদিন ওদের বাড়িতে গিয়ে দেখি, কেমন যেন গুমোট পরিবেশ! হাসিঠাট্টা, খুশিখুশি ভাবের স্বাভাবিকতার বদলে যেন মনোমালিন্যের পরিবেশ!
চিকেন রেসিপি -
চিকেন মোমো চিকেন বিরিয়ানী
চিলি চিকেন চিকেন রেজালা
কমল দা আমাকে দেখামাত্রই, বলে উঠলেন, "আরে এসো, তোমার কথাই ভাবছিলাম। তুমিই পারবে এটার সমাধান করতে!"
এইরে! স্বামী-স্ত্রীর সমস্যার মধ্যে অন্য ব্যক্তির মাথা না গলানোই উচিত!
স্বাতীদি'র দিকে তাকাতেই দেখি উনি মুচকি মুচকি হাসছেন!
এবার তো আমারই ধাঁধা লেগে যাবার মত অবস্থা! ঝগড়া-ঝাঁটি হলে কেউ কী হাসে?
বিজয়াদশমীর দিন কমল দা'র একদল বন্ধু এসেছিলেন, চন্ডীগড় থেকে! ওরা বাঙালি রসগোল্লা নিয়ে যেতে চান প্রত্যেকেই! কমল দা মহা উৎসাহে রসগোল্লা কিনতে বেরিয়ে পড়লেন! প্রত্যেকেকে তিনি পাঁচ কেজি করে রসগোল্লা উপহার দিতে চান!
কিন্তু বিজয়া দশমীর সময় কোন দোকানদারই বিনা অর্ডারে অত রসগোল্লা একজনকে দিতে পারবেন না!
প্রায় গোটা তিরিশেক দোকান ঘুরে কমল'দা মাত্র ১৫-১৬ কেজি রসগোল্লা যোগাড় করতে পেরেছেন! বন্ধুদের ট্রেন মিস হয়ে যাবে তাই আর বেশি ঘুরতে পারলেন না।
অনান্য রেসিপি -
বাংলাদেশী আতানাড়ূ পাটিসাপটা
মালপোয়া দুধপুলি
বন্ধুরা রসগোল্লা পেয়ে খুশি হলেও, কমল'দা বন্ধুদের মনমতো পরিমাণে রসগোল্লা উপহার দিতে না পেরে - বেজায় বিরক্ত! বন্ধুদের সী-অফফ করতে করতেই তিনি ভেবে নিলেন আর কোনদিন ঐসব 'অকৃতজ্ঞ' দোকানের রসগোল্লা কিনবেন না!
বন্ধুদের তিনি রসগোল্লা বানিয়ে পাঠাবেন!
স্বাতীদিকে কিছু না-জানিয়ে পরের দিন প্রায় কুড়ি কেজি ছানা কিনে হাজির! অত ছানা দেখে স্বাতীদির চোখও ছানাবড়া!
স্বাতীদি খুব চমৎকার রান্না করতে পারেন! কিন্তু উনি রসগোল্লা বানাতে পারেন না! কমল'দার ধারণা যাঁরা ভাল রান্না করতে পারে, তারা রসগোল্লা র মত একটা চমৎকার মিষ্টি বানাতে পারবেন না - এটা হতেই পারে না!
আসলে অনেক ছানা দেখে স্বাতীদি নিশ্চয়ই ভয় পেয়ে বলছেন ঐসব কথা! কমল'দা-স্বাতীদি এমন মানুষ যে ওদের কোন কথায় "না" বলতে খুব খারাপ লাগে!
নিরামিষ রেসিপি -
শুক্তো পটলের দোলমা
সর্ষে বেগুন শাপলা পোস্ত
আমি বললাম, "ওঃ এতক্ষণে বুঝলাম! কিন্তু কমল'দা এত ছানার রসগোল্লা বানাতে তো রাত কাবার হয়ে যাবে... তাছাড়া আমি একা...একা..."
এবার কমল'দা স্বভাবসিদ্ধ দরাজ গলায় বলে উঠল, "বান্দা হাজির বেগমসাহেবা, হুকুম কিজিয়ে..."
এরকম মানুষকে কি "না" বলা যায়!
আমার প্রয়োজনীয় কী কী লাগবে শুনে নিয়েই প্রায় ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলেন! ঘন্টাদেড়েক পর দেখি রসগোল্লা বানাবার জন্য আমার প্রয়োজনীয় জিনিষপত্রের সঙ্গে আমার হাজব্যান্ড আর বাচ্চাদেরও তুলে এনেছেন!
আমাকে আশ্চর্য হওয়ার মত সুযোগ না দিয়েই বলে চললেন, "উঁহু! কোন অজুহাত.. বাচ্চারা কাঁদছে, কর্তার অফিসের ভাত... কিচ্ছু চলবে না! তুই আজ আমার রসগোল্লা-দাসী! তোর ঘর-সংসারের দায়িত্ব সব আমার!"
স্বাতীদি সহ আমরা সবাই কমলদা'র এই 'স্বাভাবিকতায়' ফিরে আসায় খুব খুশি! বললাম, "কমল দা, এর থেকে অনেক কম খরচে আপনি বন্ধুদের অনেক বেশি রসগোল্লা পাঠাতে পারতেন!"
কমলদা এবার মোক্ষম অস্ত্র প্রয়োগ করলেন, " তা, সেটা তো পারতামই! কিন্তু আমি স্বামীজির চেলা! উনি বলেছেন না 'ওঠো। জাগ্রত হও। স্বনির্ভর হও! নিজের শক্তিকে চেনো' ! আমি কি ঐ ময়রাগুলোর ভরসায় থাকব নাকি! তাছাড়া তোর মতো একটা সোনার টুকরো বোন থাকতে, সম্মান রক্ষায় আমি বাইরের লোকের দ্বারে ঘুরব! নরকেও আমার স্থান হবে না!"
স্বাতীদি এতক্ষণে মুখ খুললেন, "তুমি দু' ঘন্টার মধ্যে ওকে বেগম-দাসী-বোন বানিয়ে ছাড়লে, আসলে তুমি ঠিক কোনটা ভাব বল তো!"
কমল দা যেন লজ্জা পেয়ে গেলেন, "কন্যা-জায়া-জননী কি আলাদা আলাদা নাকি! একই নারীর বিভিন্ন রূপ! তোমরা না থাকলে কি আমরা জগজ্জননী দুর্গা কে পেতাম?"
সেই রসগোল্লার রেসিপিটাই আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি!  দেখুন এখানে -


পাদটীকাঃ -
কিছুদিন পরে, কমলদা হঠাৎ একদিন দেখি লজ্জা লজ্জা মুখে বলছেন, "বাচ্চাদের ছুটিছাটা পড়লে, চল, সবাই মিলে একবার চন্ডীগড় ঘুরে আসি!........
না, না! তোমাকে আবার রসগোল্লা বানাতে হবে না!
আমার চন্ডীগড়ের বন্ধুরা ভাবতেই পারছে না, অত মোলায়েম, স্পঞ্জী রসগোল্লা সত্যিই ঘরে বানানো সম্ভব! সারা চন্ডীগড় খুঁজেও ওরা ঐরকম রসগোল্লা যোগাড় করতে পারেনি!"
----------------------------------------------------------------------
আরও দেখুন -
বাংলাদেশী আতানাড়ূ
দুধপুলি
পাটিসাপটা
মালপোয়া

No comments:

Post a Comment